আজকে ছোট, কালকে মোরা বড় হব ঠিক, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করবো চতুর্দিক। এমন সুন্দর ফুটন্ত গোলাপের পাপড়ির মত করে, ছোট বেলা থেকে শিশুরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চ- মাধ্যমিক শেষে অনেকে স্বপ্নের সিঁড়ি তথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে, শুরু হয় নতুন আঙ্গিকে জীবন পরিচালনার স্বপ্নের জাল বুনতে। কিন্তু; এ স্বপ্ন অনেকের পুরণ হলেও মাঝ পথে হাল ছাড়তে হয় অনেক শিক্ষার্থীদের। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়, একজন গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষাজীবন শেষ করে ভাল সরকারি চাকুরী অথবা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে যোগদান করলে, পরিবার, বন্ধু, সমাজ সকলের কাছে তাঁর গ্রহণ যোগ্যতা অতুলনীয়। পক্ষান্তরে সদ্য গ্রাজুয়েট অথবা গ্রাজুয়েশন শেষের পথে; এমন শিক্ষার্থীরা বেকার থাকলে, তাকে অপদস্ত হতে হয় সবার কাছে প্রতিনিয়ত। এমনকি নিজের পরিবারের কাছেও সে অপদস্তের শিকার হয়। হতাশার জাল চতুর্দিক ঘূর্ণায়মান। তখন এ পৃথিবী তাঁর কাছে বিষাক্ত মনে হয়। সিদ্ধান্ত নেয়; আত্মহত্যার মত জঘণ্য কাজকে। বেসরকারি সংস্থা “আঁচল” ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্য আত্মহত্যা করেছে ১০১ জন। এদের মধ্য (ঢাবি) ০৯, (রাবিঃ) ০৪, (জবিঃ) ০৬, (শাবিপ্রবিঃ) ০৫, ডেফোডিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ০৩ জনসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২ জন শিক্ষার্থী, মেডিকেল এর ১২ জন শিক্ষার্থী যা, একটা দেশ এবং যুবসমাজের জন্য অশনি সংকেত! যারা উচ্চ- শিক্ষা লাভ করে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবে, তাঁরা যদি এমন কাজ করে তবে এমন পরিস্থিতি সামনে যুবসমাজের প্রতি নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যা থেকে উত্তরণ অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ সব আত্মহত্যার পিছনে সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক টর্চার, বন্ধু-মহলের ঠাট্টা বিদ্রুপ, কর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা সমানভাবে দায়ী। কেউ ড্রাগ এর কারণে, কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে,কেউ তার ক্যারিয়ারের চিন্তায়, কেউ হতাশার জালে নিমজ্জিত হয়ে এমন জঘন্য কাজ করেছে। ছেলে -মেয়েরা বড় হলে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়লে চিন্তা না করলেও চিন্তার পাহাড় অনায়াসে এসে হাজির হয়, সম্মুখে। ‘ আঁচল ‘ ফাউন্ডেশন আরও জানান, আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্য বয়সের সীমা (২২-২৫) এর মধ্যে, যারা অনার্স তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে পড়ে। এছাড়াও অন্যতম কারণ, চাকুরির বাজারে কম্পিটিশন অনেকটাই বেশি যা অকল্পনীয়, এবং (কোভিড ১৯) এর কারণে সব লন্ড- ভন্ড একাকার করে দিয়েছে, শিক্ষা- ব্যবস্থা। যা অনেকেই সাধারন ভাবে মেনে নিতে পারে নি। এমন জঘন্য কাজকে রোধ করতে হলে ; ইসলামিক জ্ঞান, নৈতিক শিক্ষা, এবং আত্মহত্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে তাঁদের অবগত করতে হবে। এ সকল শিক্ষার্থীদের কোন ভাবেই মানসিক টর্চার, অহেতুক গালমন্দ করা কোন ভাবেই করা যাবে না। শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থান যদি না হয়, তাহলে এমন ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন এবং যারা শিক্ষিত বেকার আছে, তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হলে, আশা করা যায়- শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবনতা অনেকটাই কমে যাবে। আজকের শিশু,আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আজকের তরুণ যুবক আগামী দিনের জাতির কর্ণধার, সুতরাং এমন ফুটন্ত গোলাপ যদি আমাদের মাঝ থেকে ঝরে যায়, সেটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। যারা বেকার আছে, চাই শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সবাই যেন কর্ম করে খেতে পারে এমন ব্যবস্থা সরকারের করতে হবে।
AUTHOR
মো. আব্দুল করিম গাজী শিক্ষার্থী : আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা,ফেনী কামিল /মাস্টার্স (হাদিস বিভাগ)