শিক্ষকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক

মো. আব্দুল করিম গাজী।আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী।কামিল/ মাস্টার্স (হাদিস বিভাগ)

শিক্ষকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক।

এবং একটি দেশের শিক্ষার মান নির্ভর করে সেই দেশের শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসম্মত শিক্ষার ২০ শতাংশ নির্ভর করে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ওপর বাকি ৮০ শতাংশই নির্ভর করে যোগ্য শিক্ষকের ওপর। বর্তমান সময়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ছাত্র- শিক্ষকের সেই সোনালি দিনগুলো তেমন আর দেখা যায় না। যে ছাত্ররা শিক্ষকদেরকে দেখা মাত্রই চলন্ত বাই সাইকেলে থাকলেও নেমে যেতেন, শিক্ষককে সালাম দিতেন । মানুষ মনে করত নিশ্চয়ই এটা ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হবে। কিন্তু কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে এমন সব চোখ জুড়ানো দৃশ্য। ছোট বেলায় সকলের বাংলা পাঠ্য-পুস্তকে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কাজী কাদের নেওয়াজ-এর কবিতা ছোট বড় সবার মুখে-মুখে ছিল।

বাদশাহ আলমগীর-

কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।

একদা প্রভাতে গিয়া

দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া

ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে

পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,

শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধূলি

ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ সঞ্চারি অঙ্গুলি।

আজকের এই দিনে- এমন দৃশ্য খুব একটা বেশি দেখা যায় না।

‘শিক্ষা – জাতির মেরুদণ্ড’ কিন্তু এমন শিক্ষা নয়, যে- শিক্ষার কারণে শিক্ষক, সহপাঠি সাধারন মানুষ, তাঁর দ্বারা আক্রান্ত হয়। একজন সু-শিক্ষিত ছাত্র/ছাত্রী তাঁদের আচরণ দেখলেই যেন বুঝা যায় সে একজন আদর্শবান মানুষ। একটা শীতল বটগাছের মতো, যেখানে মানুষ প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারে। এমন করে যদি ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হয়, তাহলে এর সুফল সমাজ, পরিবার এবং রাষ্ট্রের মধ্যে পজিটিভ প্রভাব ফেলবে। এমন শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে একজন শিক্ষক গর্ববোধ করে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র/ ছাত্রীর কারণে, শিক্ষকরাও তারা তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর এমন সব দায়িত্ব পালন করতে গেলে, হুমকি, পুকুরে ফেলে দেয়াসহ আবার কাউকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। এমন জঘন্য আচরণ যদি একজন শিক্ষককে প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে মেধাবী শিক্ষকেরা এ শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইবে না। আর এটার চাক্ষুষ প্রমাণও আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের কয়েক বছরের বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট দেখলে বুঝা যায়, বেশিরভাগ ফরেন ক্যাডার, কাস্টমস, এডমিন, প্রশাসন, পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেশি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েও যোগ দিচ্ছে এমন ক্যাডারে। কারণ, এখানে নিরাপত্তা, সম্মান দু’টাই থাকছে।

তাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল শিক্ষকের যথাযথ মূল্যায়ন এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এবং যারা এ ধরনের অন্যায় শিক্ষকদের সাথে করবে, তাদেরকে এমন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করতে কেউ সাহস না পায়। আর কোন প্রকার ক্ষমতা, টাকার জোর, দলীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেন এমন অপরাধ কেউ করতে না পারে, সেদিকে সরকার এবং কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *