কিন্তু কেনো?

রাফিয়া নূর রিমতি

পর্ব-১

রিশা চুলোয় দুধ বসিয়েছে। হঠাৎ তুহিন এসে বললো, পরেই গেলো সবটুকু দুধ। হাত মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

“আনমনা কেন? তোমার হাতে আরেকটু হলে ফোঁসা পড়ে যেতো। সাবধানে কাজ করতে হবে তো তোমাকে। আমি আসছি”।

তুহিন চলে গেলো রিশা গেট লাগিয়ে রান্না ঘরে এসে, রান্নার কাজটুকু শেষ করলো। বিকাল হয়ে এসেছে একবারও তুহিন ফোন করেনি। রিশা টেনশন করছে আর ভাবছে যে মানুষটা দিনে ৪ বেলা ফোন করে আজ এখনও কেন ফোন করছে না! বিকাল ৫ টায় কলিং বেল বাজে রিশা অবাক হলো একটু আতংকিতও বটে! সচরাচর এই সময় কেউ আসে না বাসায়। গেট খুলে দ্যাখে কিছু সাদা গোলাপ গেটের সামনে রাখা সাথে একখানা লাল চিঠি। চিঠি আর ফুলগুলো হাতে নিয়ে মুচকি হেসে গেট লাগিয়ে বাসায় ঢুকে চিঠিখানা খুলে হাসি মুখে পড়া শুরু করলো।

“মুন! মনে করো তো আজ কোন দিন? আজ আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো। তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বের শুরুটা হয়েছিলো। তোমার মনে নেই সব সময়ের মতো আমি জানি! তাই মনে করিয়ে দিলাম। পড়ছো আর মিষ্টি মিষ্টি হাসছো তো! তোমার জন্য একটা উপহার আমার রিডিং রুমে। জানি এই সেন্টেন্স টা পড়ে দৌড়াবে গিফট এর জন্য কোনো কাজ হবে নাহ দৌড় দিয়ে।

পুরো চিঠি শেষনা করলে গিফট পাবা না। এখন মুখটা ভ্যাংচালে বুঝছি তো। আচ্ছা আর কিছু লিখছি না তোমার এই মুখ ভ্যাংচানোর জন্য কথা টা বলা। যাও গিফট টা নেও।

জানি, ৫ মিনিটের মধ্যে আমার কাছে ফোন আসবে। বেশ আমি ৫ মিনিট ওয়েট করি তুমি ততক্ষনে গিফট টা নিয়ে খুলে ফোনটা হাতে নেও। যাও! তাড়াহুড়ো করে গিফটের রেপিং খুললো রিশা!

একটা মেরুন রং এর শাড়ি সাথে বকুলেরগাজরা সাথে আরেকটা নোট। নোট খুলে পড়া শুরু করছে, “অনেকদিন হয়েছে শাড়ি পড়োনি। তোমায় গাজরা অনেক মানায়। খোপা করে রেখো আমি গাজরা পড়িয়ে দিবো। আর হ্যাঁ কপালে একটা কালো টিপ দিয়ো।

৫ মিনিট হয়েছে ফোন বাজছে।

….

তুহিনঃ বলেন ম্যাডাম? কেমন লেগেছে?

রিশাঃ কখন আসবে? সারপ্রাইসজ আছে তোমার জন্য!

তুহিনঃএই তো রাত ৮ টা নাগাত চলে আসবো।

রিশাঃ আচ্ছা অপেক্ষা করছি।

একটু হেসে ফোন কেটে দিলো।রাত ৮ টা নাগাত রিশা রেডি হয়ে খোপা করে গাজরা নিয়ে খাওয়ার টেবিলে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। বার বার সময় দেখছে ৮:১০, ৮:২০,৮:৪৫. এই তো কলিং বেল বাজলো!

রিশা দরজা খুলে তুহিনকে জড়িয়ে ধরে বললো “thank u”।

তুহিন গাজরা পড়িয়ে দিলো রিশাকে। মেরুন শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। হ্যাঁ! কপালে টিপ পড়েছে সে কিন্তু কালো না মেরুন। তুহিন ফ্রেস হয়ে খাওয়ার টেবিলে এসে বসলো।রিশা খেতে দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এমন করে হাসতে আর কখনও তুহিন তাকে দ্যাখেনি।

থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,”এই যে ম্যাডাম?কি সারপ্রাইজ? বলবেন না?”

রিশা বললো, “নতুন মানুষ আসছে”

“কি!”

তুহিনের চোখে পানি, রিশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলবো তুহিন! তুহিন অনেক খুশি।

রিশাকে বললো, বেশ এখন থেকে নিজের খেয়াল রাখতে হবে তোমাকে বেশি বেশি। তুহিন আর রিশা দুজন খাওয়া শেষ করে। বসে গল্প করছে।

রিশা বলছে, “কেমন জানি আমাদের ১২ টা বছর হয়ে গেলো।

“ঠিক ই বলেছো! তুহিন ঘুমিয়ে পড়েছে। রিশা গেস্ট রুমে খাটের নিচে রাখা লাগেজ থেকে ডায়েরী বের করে। ডায়েরী পড়া শুরু করলো।

ডায়েরী প্রথম পাতায় লিখা”Risha & Shafi

পর্ব -২

Risha & Shafi”

রিশা যখন ক্লাস নাইনে তখন শাফির সাথে তার দেখা হয়। ক্লাসের বেয়ারা ছেলেদের মধ্যে একজন ছিলো শাফি। পড়াশুনায় যে খারাপ তা কিন্তু না ১ম মডেল পরীক্ষায় টপ টেনের মধ্যে ছিলো। কিন্তু ভালো স্টুডেন্টরাও কি পিছনে বসে?এমন করে ফাজলামি করে যেমন করে শাফি করে সে(রিশা) ভাবে। বেশ রিশা ফাইনাল পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ, শাফি ১৬ তম হলো।দুইজনে একই ক্লাসে। টেনের ক্লাস শুরু,

শাফি হঠাৎ টিফিন পিরিয়ডে তার সামনে এসে তাকে বললো, “এই যে শুনো? তোমাকে আমার ভালো লাগে, তুমি কি কাউকে পছন্দ করো?”

রিশা বললো, “না আমি কাউকে পছন্দ করি না””বেশ তাহলে আমার তোমাকে কেমন লাগে? আমি এভারেজ একটা স্টুডেন্ট”। রিশা অবাক হয়ে চলে আসলো ক্লাসে।

দেখতে দেখতে ক্লাস টেনের টেস্ট পরীক্ষা চলে আসলো!রিশা মন দিয়ে পড়ছে। তুহিন এর মধ্যে সপ্তাহ খানেক স্কুলে আসেনি। রিশা খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো খোঁজ পায়নি। তুহিন যেদিন স্কুলে আসলো হাতে ব্যান্ডেড। রিশা অবাক! স্যার জিজ্ঞেস করেছে ক্লাসে, কি হয়েছে সে বলেনি। রিশা টিফিন পিরিয়ডে জিজ্ঞেস করলো, “তা শুনি কার সাথে, কেন মারামারি হয়েছে?””আমার মেজাজ খারাপ হয়েছে তাই মারামারি হয়েছে”। রিশা কিছু না বলে বললো, “পরীক্ষার প্রিপারেশন কেমন?””হম ভালো”। রিশা শাফিকে বললো স্কুল ছুটির পর লাইব্রেরিতে অপেক্ষা করতে। লাইব্রেরিতে রিশা শাফি কে বলেছে, “আমার এসব মারামারি পছন্দ না, এসব ছাড়তে হবে। নাহলে” বলে কেঁদে ফ্যালে রিশা। শাফি রিশার দিকে তাকিয়ে বললো “আমি মারামারি এমনি মারামারি করিনি, আমি কারন ছাড়া তাকে মারিনি। কি কারন জিজ্ঞেস করলে বলতে পাবো না। সব তো শুনতে হবে না। আর আমি এমনই, এক্সসেপ্ট মি ইন হু আই এম। রিশা চোখ বড় করে তাকিয়ে, চোখ মুছে চলে গেলো।

টেস্ট পরীক্ষা হলো দুইজনের এ-প্লাস এসেছে। দুই জনে খুশি। শাফি বলছে স্কুল ছুটির পর তাকে বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসবে।

রিশা আর শাফি স্কুল ছুটির পর রাস্তায় রিশার বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটছে। শাফির ১ম প্রেম নাকি বাইক, সে বাইক কিনবে। রিশাকে তা বলছে কিন্তু রিশা বুঝাচ্ছে তাকে, এখন কিনে কোনো লাব নেই। পরে কিনতে বলছে। সে বুঝবে না। বাসায় নাকি বলেছে বাইক কিনে দিবে বাবা শর্ত দিয়েছে এসএসসির রেজাল্ট ভালো হলে বাইক কিনে দিবে। রিশা নিশ্চুপ।

রিশা বাড়ি চলে গেলো, শাফি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলো। দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। ৩ মাসের ছুটি। শাফি আর রিশার সপ্তাহে একদিন দেখা হয়। বেশ পরীক্ষা রেজাল্ট দিলো রিশা সবগুলো সাবজেটে এ-প্লাস পেয়েছে। শাফির বাংলায় এ-প্লাস মিস। কিন্তু সে বাইক কিনে পাবে।তার কোনো আপসোস নেই। কলেজে ভর্তির সময়। শাফি সাইন্স এ আর পড়বে না সে এখন কমার্স পড়তে চায়। বাসায় বলেছে সবাই রাজি।

আর রিশা প্রোপার সাইন্স প্রেমিক। ডাক্তার তাকে হতেই হবে তাই কলেজে সে ভর্তি হলো। শহরে ভালো একটা কলেজে যেখান থেকে মেডিকেলে প্রত্যেকবছর অনেক স্টুডেন্ট চান্স পায়। আর শাফি স্কুল যে প্রতিষ্ঠানে পড়েছে, ঐ প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখায় ভর্তি হলো। দু জনের কলেজ আলাদা।

শাফির কলেজ শেষ হয় রিশার আগে তাই রিশার কলেজের সামনে এসে ক্যান্টিনে অপেক্ষা করে। রিশা বের হলে, রিশাকে বাইকে নিয়ে বাসায় ড্রপ করে আসে।। রিশার বাবা শাফিকে অনেক পছন্দ করে। রিশার বাসায় তার মা রিশা আর শাফির ব্যাপারে জানে। কলেজের ১ম বছর প্রায় শেষের দিকে রিশা পড়াশুনা করছে কিন্তু শাফি পড়ছে না বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। বন্ধুদের সাথে আড্ডা এইসব নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। রিশা শাফিকে বলেছে পড়াশুনা ভালো করে করতে। শাফি শুনে না কিন্তু শাফির কথা রিশার রেজাল্ট যাতে খারাপ না হয়। কলেজের ২ বছর বেশ ভালোয় গেলো দুজনের। পরীক্ষার আর ১০ দিন বাকি। এর মধ্যে শাফির হয় এক্সিডেন্ট বাইক নিয়ে। ভ্যাগিস! বেশি কিছু হয়নি পায়ে একটু ছাল চামরা উঠে যায়।তারপর পরীক্ষা শেষ হলে দুজনের।তুহিন ডাকছে।

রিশা! রিশা।রিশা বললো, আসছি।রিশা বিছানায় তুহিনকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। তুহিনকে বললো, “আমি গল্পের বই পড়ছিলাম শেষ না করেই চলে এসেছি এখন ঘুম আসছে না। আগে শেষ করি গল্পটা তারপর নাহয় ঘুমাবো”।তুহিন ঘুমিয়ে গেছে।রিশা উঠে এসেছে ডায়েরী পড়ার জন্য

পড়ছে,এখন দুজনে ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশনের জন্য ঢাকায়। একজন মেডিকেল কোচিং করছে আরেকজন ভার্সিটি। কোচিং আর কই করছে ঘুরে বেড়ানো দুইজনের। এই নিয়েই কাটছে তাদের সময়। পরীক্ষার রেজাল্ট হল, রিশা গোল্ডেন মিস করেছে শাফি জিপিএ-৫ পায়নি। শাফির তো মন খারাপ ফোন বন্ধ করে রেখেছে. বাসার কারো ফোন ধরছে না। রিশাও রাগ করেছে কেন এত খারাপ রেজাল্টা, পরীক্ষা নাকি ভালো হয়েছিলো। বেশ এখন ভর্তির পরীক্ষায় যাতে ভালো ভার্সিটিতে হয় সেই চিন্তা দুইজনের মাথায়। মেডিকেল পরীক্ষা হলো. ৩দিন পরে রেজাল্ট হলো রিশার চ্যান্স হলো না। রিশার মন খারাপ। শাফিরও ভর্তি পরীক্ষায় যে ৫ টা ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়েছে একটাতেও হলো না। রিশাকে ফোনে জানালো, তার কোথাও চান্স হয়নি। রিশার মেডিকেলে হয়নি এই নিয়ে মন খারাপ। তারপর আবার শাফিরও হয়নি। রিশা রাতে শাফিকে ফোন করে।

পর্ব-৩

শাফিঃ বলো। খাওয়া করেছে। আরে টেনশন নিয়ো না। নেক্সট টাইমে মেডিকেলে হয়ে যাবে ভালো করে পড়ো।

রিশাঃ তোমার সাথে থাকলে আমি আমার পড়াশুনা করতে পাবো না। নিজের পায়ে দাড়াতে পাড়বো নাহ।আমাকে পড়াশুনা করতে দাও ক্যারিয়ারে কিছু হতে দেও প্লিজ।

শাফিঃবেশ।

ফোন কেটে দিলো। রিশা এখন মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে। শাফি প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। সেও পড়াশুনা শুরু করেছে.২য় বার রিশা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। শাফি শাফির মতো জীবন যাপন করছে রিশা রিশার মতো।

ডায়েরী বন্ধ করে রিশা বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো সকালে উঠে দেখে সকালের চা- নাস্তা তার সামনে তুহিন আজকে ছুটি নিয়েছে। একসাথে দুইজনে সময় কাটাবে বলে। রিশা খুশি! দিনটা দুইজনের ভালো গেছে। তুহিন দিনে রান্না করেছে। বিকালে দুজনে ঘুরতে গিয়েছে। রাতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে দুজনে শুয়ে পড়ে।

পরের দিন রিশা উঠে পাশের এলাম ঘড়িতে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বাহিরে বের হয়ে এসে দেখে সকালের নাস্তা টেবিলে রাখা, সাথে নোটে লিখা “তুমি ক্লান্ত ছিলে তাই ডাকিনি,আমি চলে গেলাম, পৌচ্ছে তোমাকে জানাব” রিশা নাস্তা করে রান্না শেষ করে দুপুরে তুহিনকে ফোন করে দুপুরে খেয়েছে কিনা, রাতে কটা বাজবে আসতে এসব জেনে নেয়। ফোনে জানতে পারলো আজ কাজে তাকে রাজশাহী যেতে হবে কালকে রাতে বাসায় আসবে। রিশা টিভি দেখছিলো। টিভি দেখা শেষ করে ডায়েরি টা বের করলো আবার। পড়া শুরু করলো

৪বছরের সম্পর্ক এমন করে শেষ হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি কখনও। ২টা পৃষ্টা পড়,

৬ বছর পর আজকে তোমার সাথে দেখা হলো। তুমি আগের মতোই আছো। তোমাকে বাস থেকে দেখেই চিনতে পেরেছি। বাইক নিয়ে নিতে এসেছো। যদি সিমান্তের বিয়েতে না আসতাম তাহলে হয়তো দেখা হতো না তোমার সাথে। বাস থেকে নেমে শাফি কে বললো, “আমার বড় ব্যাগ আছে””বড় ব্যাগ আমি কি ভাবে নিয়ে যাবো বাইকে”, শাফি বললো। বলে দড়ি খুঁজতে গেলো সে। দড়ি খুঁজে নিয়ে এসে ব্যাগটা বাইকে বাঁধলো। ওহ! সিমান্ত ওদের কমন ফ্রেন্ড।রিশা শাফিকে বললো,” চা খাবো”। শাফি গাড়ি থামালো চায়ের দোকানে দুজনে চা খেলে। কথোপকখন হলো তাদের। প্রকৃতি যেন ওদের বলছে কথা বলো তোমরা। প্রকৃতিও তাদের কথা বলার সময় করে দিলো।হুট করে জোড়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

রিশা বলছিলো,”এতদিন কতগুলো ফোন করেছি, যেই নম্বর দিয়েই ফোন করি নম্বর ব্লক করে দেও।

কেন?”শাফি কোনো উত্তর দিলো না। চা শেষ করে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়।শাফির কাছে রিশার প্রশ্নের উত্তর নেই।বৃষ্টি থামলো। ২০ মিনিটের মধ্যে সিমান্তের বাসায় এসে পৌছালো দুজন। সিমান্তের গায়ে হলুদ আজ। রিশা শাফিকে জিজ্ঞেস করছে, “তুমি বললে লাল শাড়ি পড়বো”

“তুমি শাড়ি পড়বে কিনা আমি জানি না”।

রিশা লাল শাড়ি পড়ে, ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছে। এমন সময় শাফি এসে রিশাকে দেখে কিছু বললো না।

তারপর ফ্রেন্ডরা মিলে ছবি তুলছিলো রিশা শাফিকে বললো, “আই এম সরি!আমার এত সেলফিস হওয়া ঠিক হয়নি”

“তোমার সেলফিসনেস এর কারনে আমি আগাতে পারিনি ৪ বছর বাসায় নষ্ট করেছি। পড়াশুনা ছেড়েছি”

রিশা বলছে, “এখন তো আবার শুরু করেছো তুমি। ২ টা বছর সময় নেও। আমার ইন্টার্নি চলছে। তুমি কোনো একটা বিজনেস শুরু করো। আমি বাসায় সামলিয়ে নিবো”

“তুমি ডাক্তার হবে তুমি ভালো কাউকে ডিজার্ব করো”

শাফি খাওয়া শেষ করে উঠে এসেছে।

সিমান্তকে বলে রিশা শাফি কে রাজি করিয়েছে যাতে শাফি তার বাসায় রিশাকে রাতটা রাখে। রিশাকে নিয়ে শাফি বাসায় গেলো। শাফির বোন রিশাকে দেখে অবাক। রিশার সাথে অনেক কথা বললো। রিশা শাফির মায়ের সাথেও কথা বলে। সকালে রিশা শাফি আর শাফির বোন সিমান্তের বিয়াতে যায়। দুজনের ড্রেস একই কালারের। একজনের নীল শাড়ি আরেকজনের নীল পাঞ্জাবি। বন্ধুরা মজা করছে ওদের নিয়ে। বেশ! বিয়ে শেষ।

রিশা সকালে বগুড়ায় চলে যাবে। সকালে শাফি রিশাকে স্ট্যান্ডে নিয়ে যায় বাসে তুলে দেয়ার জন্য। ব্যাস স্ট্যান্ডে রিশা বলে, “আমি তোমার সাথে বগুড়ায় যাবো আমাকে রেখে আসো তুমি” আমার পকেটে কোনো টাকা নেই আমি যেতে পারবো না। তুমি কি পাগল হয়েছে?” বাস চলে এসেছে। দুইজনে বাসে।

রিশা শাফিকে বুঝায় তাদের অপূর্ণ সম্পর্ক আবার ঠিক করার জন্য শাফি বুঝে রাজি হয়ে যায় অসম্পূর্ণ সম্পর্কটাকে সম্পূর্ণ করার জন্য। রোজ তাদের কথা হয়।এমন করতে করতে ২ বছর হয়ে গেলো, শাফি কোনো ব্যবসা দাঁড় করতে পারলো না। রিশা তাও বলছে সে তার ফ্যামিলিকে বুঝিয়ে নিবে। কিন্তু শাফি বলে দিয়েছে। সে জীবনে কিছু করতে পারবে না রিশা যাতে তার অপেক্ষায় না থাকে। রিশা বলেছে ওর ভুলের কারনে এখন তার এই অবস্থা। সে সেটা ঠিক করতে চায়। শাফি ফোন করেছে বললো, “দেখো! তুমি ডাক্তার, আমি কিন্তু অনার্স পাশ করা একজন বেকার। আমাদের ফিউচার কখনও সুন্দর হবে না।তোমাকে ভালো একটা ফিউচার দিতে পারবো না। তুমি অনেক ভালো ফিউচার ডিজার্ব করো। প্লিজ তুমি চলে যাও, সরি” ফোন কেটে গেলো।

পর্ব-৪

ডায়েরী টা পড়া শেষ করে। ডায়েরী বন্ধ করে রেখে রিশা চোখের পানি মুছে। ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়লো রাতে না খেয়েই।

তুহিন রিশার মেডিকেলের বন্ধু একসাথে গ্রাজুয়েশন শেষ করে। যেদিন রিশাকে তুহিন রিয়ের জন্য প্রপোস করে। রিশা রাজি হয়ে যায়!সংসার জীবনে দুইজনে অনেক খুশি। ১২ বছরের মধ্যে ৭ বছর বন্ধুত্বের। কলেজে একসাথে পড়েছে। দুজনই কলেজ থেকেই বন্ধু ছিলো। বাকি বছর তাদের সংসারের। তুহিন সব জানে শাফির ব্যাপারে। তবুও তাকে ভালোবাসে।

তুহিন কাজে কোথাও যায়নি আজকে হাসপাতালে থাকবে। যাতে রিশা ডায়েরী টা পড়ে শেষ করতে পারে আর নতুন জীবনের শুরু করতে পারে।

সকালে রিশা ঘুম থেকে উঠে তুহিন কে ফোন করে বলে, “শুনো! তোমার হাসপাতালে থাকা লাগবে না। বাসায় আসো। আজকে অর্ধেক বেলা ছুটি নিয়ে আসো। আমি আর বাবু তোমার সাথে টাইম স্পেন্ড করবো”

“হুম আসছি”

সম্পর্ক সবসময় পূর্ণতা পাবে এটা সত্যি কিন্তু সব সম্পর্কের পরিপূর্ণতা যে একসাথে থাকা তা না। পরিপূর্ণতা আসলে সমাপ্তি হওয়া।রিশার গর্ভবতী হওয়ার ৫ মাস হচ্ছে। তুহিন আর রিশা বিকালে চায়ের কাপে চুমু দিতে দিতে ডিসাইড করছে ছেলে হলে কি নাম রাখবে মেয়ে হলে কি নাম রাখবে। রিশার কেন জানি অস্থির লাগছে, সে বুঝতে পারছে না কেনো! তুহিন সমানে কথা বলেই যাচ্ছে। রিশা কেমন জানি অস্থিরতা না দেখিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। তুহিন বুঝতে পারেনি অস্থিরতা। সন্ধ্যা হয়ে আসলো রিশা ঘুমিয়ে পড়েছে, তুহিন রাতের জন্য রান্না করছে ছুটির দিনে সেই রান্না করে।

রান্না শেষকরে ফ্রেস হয়ে কিছু কাজ করে রিশা সহ খেতে বসেছে। সকাল হলো রিশা ঘুম থেকে উঠে তুহিন সহ নাস্তা করে। তুহিন কাজে চলে যায়। রিশার অস্থিরতা এখনও শেষ হয়নি। কেন অস্থির লাগছে সে বুঝতে পারছে না। হাতে ফোন নিয়ে কি জানি কি মনে হলো ফোন করে তুহিন কে বললোবিকালের মধ্যে বাসায় ফিরতে। তুহিন খুশি হয়ে বলে, সে আসবে বিকেলের মধ্যে। বিকালে কলিং বেল বাজে, রিশা গেট খুলে দেয় তুহিন অনেক হাসি মুখে বাসায় ঢুকে ভাবছে নিশ্চয়ই রিশার মনে পড়েছে আজ কি!

পর্ব-৫

রুমে ঢুকলে, রিশা তাকে পানি এনে দেয়। তুহিন সারপ্রাইজ পাবে এই আশায় কিন্তু রিশা কিছুই বলছে না।

সে বলছে, “কেন আসতে বলেছো, কি হয়েছে?” মুখে ঐযে কিছু পাওয়ার হাসি যেমন ছোট্ট বাচ্চাদের চকলেট হাতে পাওয়ার আগ মূহুর্তে হাসি ঠিক তেমন হাসি।

রিশা বললো তার রেগুলার চেক আপ ডেট পার হয়ে এসেছে একবার চেকআপ করাতে যেতে হবে সন্ধ্যায় এপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়ে গেছে। তুহিন বুঝতে পারলো রিশার মনে নেই। চেকআপের সময় তুহিনকে সাথে রাখে না রিশা আজ বলেছে যাতে থাকতে। সব চেক-আপ শেষে ডাক্তার যখন আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখছিলো তখন তুহিন কে রিশা

বলে, “হেপ্পি বার্থ ডে বাবা”

তুহিন হতভম্ব, কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। যেই সন্তানের নিয়ে নাম রাখা, কি করবে সন্তান আসলে, এসব ভাবা, তাকে দেখতে পেয়েছে। চোখে খুশির যে পানি তা ধরে রাখতে পারে নি।

রিশার দিকে তাকিয়ে বললো,” তোমার কাছে পাওয়া বেস্ট গিফট আমার জীবনে,বলে রিশার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আদর করে ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে আসে সে।

অনেক সাবধানে থাকতে হচ্ছে রিশাকে। তুহিনের বাবা মা বাসায় এসেছে, রিশার খেলায় রাখার জন্য। তার আর মাত্র ৭ দিন বাকি ডেলিভারির।

হুট করেই বাসা থেকে তুহিনকে ফোন করা হলো। রিশাকে ভর্তি করা হলো হাসপাতালে, তার পেইন শুরু হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে অপারেশন হবে। রিশার পাশে তুহিন, তার কষ্ট হচ্ছে জেনেও তার জন্য কিছু করতে পারছে না সে। অপারেশন এ তুহিনকে বলা হলো সে থাকতে পারে তার ওয়াইফের সাথে। সে বললো সে থাকবে। ডাক্তার তুহিনের সাথে কথা বলেছে অপারেশনের আগে।

অপারেশন হলো তাদের সুন্দর একটা ফুটফুটে মেয়ে বাচ্চা হয়েছে। সে এখন রিশার রুমে। রিশা তো খুশি তুহিন রিশাকে দেখেই খুশি। রিশাকে রেখে তুহিন বললো, “আমি আসছি”

তুহিন বাসায় গিয়ে পাঞ্জাবি পড়ে মাথায় টুপি পরে কবর স্থানের দিকে রওনা হলো!

পর্ব-৬

তাদের ফুটফুটে মেয়ে শিশু হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি। মেয়ের জানাজা করে মেয়েকে শুয়ে রেখে। বাসায় ফিরে কাপড় চেন্স করে মিষ্টি নিয়ে হাসপাতালে যায় তুহিন। রিশা তো মহা খুশি।

তাদের রিলিজ করে দিয়েছে। বাসায় এসেছে রিশা আর তাদের ছোট্ট মেয়ে। তুহিন অনেক খেয়াল রাখে তাদের দুজনের। মেয়ের নাম রেখেছে মিতশি।

মেয়ের নাম মেয়ের মা ঠিক করেছিলো তুশা কিন্তু তুহিন বলেছে মেয়ের নাম সে রাখবে, রেখেছে মিতশি। তিনজনের সংসার বেশ ভালোই কাটছিলো তাদের। মিতশির বয়স এখন ১২ বছর। রবাবা মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যায়। এই নিয়েই তাদের সুখের সংসার। রিশাকে তুহিন বলেছে, তার কথা বলার আছে রিশার সাথে। তুহিন নিশ্চুপ

রিশার সামনে,”কি হয়েছ? তুমি কি অসুস্থ?”

“না আমার কিছু হয়নি, তুমি বসো তো”

“বলো না তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে”

“তুশা!” “তুশা কে””

“আমাদের মেয়ে, যাকে আমি একাই দেখেছি আদর করেছি”

“কি বলছো তুমি!, আমাদের মেয়ে তো মিতশি, তুমি কি ড্রিং করেছে?” নাখ মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, “না তো”।

“রিশা, ডাক্তার আমায় বলেছিলেন আমাদের বেবি মারা গিয়েছিলো পৃথিবী দেখার আগে! তুমি এই কথা সহ্য করতে পাববে না তাই লুকিয়েছিলাম”

তুহিনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রিশা বলছে, “আমাকে এত বছর পরে কেন বলছো? এতদিন কেন বলোনি?”

“তোমাকে না বলে এত বছর কেমন করে কাটিয়েছি, বলে বুঝাতে পারবো না”

“আমার তুশাকে আমি দেখি নি, আমার তুশাকে দেখার অধিকার কি আমার নেই, আমি কি তাকে জন্ম দেয়নি, কেন এমন করেছো,

মিতশির খাওয়ার সময় হয়ে গেছে” তিনজনে খেতে বসেছে। খাওয়া শেষ করে রিশা মিতশির সাথে তার রুমে ঘুমিয়েছে আজকে।

মিতশি বলে,সে সব জানে গত বছর তার বাবা তাকে সব বুঝিয়ে বলেছে,। সে এও বলেছে তার বাবা কেন এমন করেছে কেন তাকে(রিশা) কিছু বলেনি।

রিশা সব শুনে রাতে মিতশিকে বলে,” চলো মা ঘুমিয়ে পড়ি অনেক রাত হয়েছে” মিতশি ঘুমিয়ে পড়ে।

রিশা কাঁধ হয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। সকাল হয়ে যায়। মিতশি মাকে ডাকে।মা উঠে না। সে ভাবে রাতে মায়ের ঘুম হয়নি ভালো করে, তাই মা ঘুমাক। তুহিন এসে ডাকে রিশাকে, রিশা সাড়া দেয় না.সে এসে রিশার হাত নেড়ে, বসে পড়ে মেঝেতে। রিশা আর নেই।

হয় তো মেয়ের কাছে যাওয়ার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারেনি, তাই শোনা মাত্রই ছুটে চলে গেছে মেয়ের কাছে।

রিশা চলে যাওয়ার ৩ বছর হলো।

আজ শুক্রবার বাসায় কে জানি এসেছে, তুহিন বসে কথা বলছে তার সাথে কিন্তু উনার নজর কাকে যেন খুঁজছে। চারদিকে তাকায় কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না। বাসায় শাফি এসেছে রিশাকে বিয়ের কার্ড দিতে। তুহিনের কাছে জানতে চায় রিশা কোথায়?বিয়েতে যাতে মেয়ে সহ আসেই।শাফির বিয়ে হয়েছে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে আসে। ওর বউ, চাকুরী করে না গৃহীনি, যেমন শাফির পছন্দ ওমন। শাফি তাদের বাসার মেজো ছেলে, বাবা মায়ের দায়িত্ব তার কাঁধে। সে এখন পৌরসভার চেয়ারম্যান। তার অনেক কাজ।। একটা সম্পূর্ণ জীবন যাপন করছে। ফ্যামিলিকে খুশি রেখেছে সে। শাফির জানতো রিশার মেয়ে হয়েছিলো জানতো সে বেঁচে ছিলো না। রিশাকে ফোন করে কনগ্রেটসও জানায়। তুহিন সহ তুশার জানাজা পড়েছে আর আর তাকে মাটিও দিয়েছে। শাফির বোনের বিয়ে এটেন্ড করলো তুহিন তাদের মেয়ে মিতশি!শাফির রিশা আসলো নাহ।

শাফি জিজ্ঞেস করলো “রিশা?”

তুহিন বললো, “রিশা আর আসবে নাহ!”

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *