বলে কয়ে কি প্রেম আসে!

প্রেম হয় শুধু দেখা ও চোখের ভাল লাগা থেকে, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, প্রেম হয় অপমান থেকে, এমনকি প্রেম হয় লজ্জা থেকেও। প্রেম আসলে লুকিয়ে আছে মানবসম্প্রদায়ের প্রতিটি ক্রোমোসমে। একটু সুযোগ পেলেই সে জেগে উঠে-হুমায়ূন আহমেদ।

Category: Bangla Story
Published: 13/08/2024

প্রেম হয় শুধু দেখা ও চোখের ভাল লাগা থেকে, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, প্রেম হয় অপমান থেকে, এমনকি প্রেম হয় লজ্জা থেকেও। প্রেম আসলে লুকিয়ে আছে মানবসম্প্রদায়ের প্রতিটি ক্রোমোসমে। একটু সুযোগ পেলেই সে জেগে উঠে-হুমায়ূন আহমেদ।

সময়টা ২০১৯, শিক্ষিত মা বাবার একমাত্র মেয়ের পাশাপাশি মোটামুটি ভালো ছাত্রী হওয়ায় এবং নিজের তৃপ্তি নামটার স্বার্থকতা প্রমাণে শহরে পড়াশোনার সুযোগ হয়েছিলো আমার। রাজশাহীর নিউ ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমদিন একরাশ আশা ভরসা এবং নতুন কিছু দেখার উৎসাহ নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করতেই সব অচেনা মুখের মাঝে নিজেকে একটু অসহায় মনে করছিলাম।
শেষ মেষ এক কোণে বেঞ্চে বসা এক অপরিচিত মেয়ের পাশে গিয়ে বসে পরলাম।
ক্লাসের ফাঁকে তার সাথে পরিচয়টা সেরে ফেললাম। ওর নাম নিশাত। কুষ্টিয়ার মেয়ে বেশ মিষ্টি এবং সহযোগী মনোভাব হওয়ায় তার সাথে গল্পটা ভালোই জমে গেলো।
স্যার ক্লাসে নাম ডাকার সাথে সাথে কোন জেলা থেকে এসেছে তাও জেনে নিচ্ছিলেন। হঠাৎই একটা নাম শুনে আমি যেনো কিছুটা থমকে গেলাম, এক ছেলে কন্ঠ শুনে আমার মনে হলো আমার চেনা কেউ, পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি ছেলেদের দলে বসে আছে ‘অয়ন’! তাকে দেখে আশ্চর্য হওয়ার কারণ আমরা ছিক্স থেকে একই স্কুলে পড়ার সুবাদে তাকে আমার বেশ ভালো মতই চেনা। তবে জানতাম না সেও একই কলেজে এসেছে।
নিশাতকে বললাম, একে আমি চিনি আমার স্কুলের! ছিক্স থেকে একসাথে পড়েছি।
নিশাত বললো, বাহ! ভালোই হলো পরিচিত কেউ আছে। সাহায্য নেয়া যাবে।
কিন্তু সত্যি তো এটাই যে অয়নকে আমি মোটেও পছন্দ করতাম না। এর কিছু শক্ত কারণও ছিলো,! আমার স্কুলের একমাত্র বান্ধুবী ইসরাত ক্লাস ছিক্স থেকে তাকে পছন্দ করতো, সরাসরি বলার পরেও বেচারিকে হতাশ হতে হয়।কারণ জনাবের আমাদের ব্যাচমেট ‘ সিথি’ কে পছন্দ ছিলো।
বন্ধুত্বের খাতিরে তাকে আমার অপছন্দ করা! আর পড়াশুনায় একটা প্রতিযোগীতা তো ছিলোই।
সেদিনের ক্লাস শেষে হোস্টেলে ফিরে ইসরাতকে জানাতেই সেও অবাকই হলো তবে ততদিনে সে অতীত থেকে বেশ অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। আমাকেও উপদেশ দিলো, -ভুলে যা ওসব, ওর থেকে সাহায্য লাগলে ওকে বলিস করবে!
কিন্তু আমি আবার বড্ড আত্মসম্মানী মানুষ, তার উপদেশ আমলে নেয়ার সময় কই!
দিন পেরিয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার সময় চলে আসে, অয়নের সাথে শিথিলতা আমার কমেনি। নিজের মতোই বেশ দিন কাটছিলো আমার। হঠাৎ পরীক্ষার হল থেকে ফিরে দেখি আমার এডমিট কার্ডটা বক্সে নেই। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।
ততক্ষণে সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে, তবুও কলেজে ফিরে রুমের চাবিটা ম্যানেজ করে নিলাম,কিন্তু একা খোঁজা তো কষ্টের! কিছুটা হতাশ হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম তখনই পাশে থেকে একজন বলে উঠলো, তুমি এখানে এখন? পাশ ফিরে দেখি ‘অয়ন’!
স্কুল জীবনে ছেলেদের সাথে না মেশায় ইতস্তত হয়ে বললাম, হ্যা আমার আইডি কার্ডটা হারিয়ে গেছে, পাচ্ছি না। রুমে একা খুঁজতে হবে তাই ভাবছি কি করা যায়!
অয়ন বললো, চিন্তা করো না চলো আমিও যাই তোমার সাথে। একসাথে খুঁজি!
অপছন্দের কারো থেকে সাহায্য নিতে মন না চাইলেও শেষ মেষ কি আর করার, দুজন মিলে খুঁজে এক কোণে কার্ডটা পেলাম। অয়নের এই সাহায্যটা তার জন্য আমার মনে সফট কর্ণার তৈরির প্রথম ধাপ ছিলো। হয়তো ঘৃণা থেকে ভালোবাসার এটাই শুরু!
এরপর মাঝে সাঝেই আমাদের কলেজে কথা হতো বিভিন্ন বিষয়ে! কেমন যেনো হুট করেই কাছে চলে আসা! একটা ভালো লাগা! হয়তো দুজনেরই!
২০২১সাল, এইচএসসি এক্সামের সময় ঘনিয়ে আসলো, প্রস্তুতি বেশ ভালোই। তবে ততদিনে ইসরাত আর নিশাতের সাথে সব শেয়ার করলে ওরা ধরেই ফেলে আমার অয়নকে ভালো লেগে গেছে! যদিও আমি মানতে নারাজ তবে কোথাও না কোথাও আমিও জানতাম আমি দূর্বল! তবে অপর পাশ থেকে হয়তো একটা স্বীকারোক্তি তখন অবধি আমাকে বাঁধা দিয়েছিলো। নিজের অনুভূতিকে সুপ্ত রাখতে বাধ্য করেছিলো!
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুদিন পর আমি হোস্টেলের সব জিনিসপত্র গোছ গাছ করছিলাম। কারণ আমার নিজস্ব এলাকা রংপুরে ফিরতে হবে, মেডিকেল কোচিংটা সেখান থেকেই সারার কথা ছিলো আমার! হুট করে অয়নের নম্বর থেকে একটা ম্যাসেজ আসে, তুমি কি আজ একটু দেখা করতে পারবে? বেশি সময় নেবো না ৫ মিনিট! একটু আসতে যদি কিছু কথা ছিলো জানানোর! আমার ভালো লাগছে না!
ম্যাসেজটা আমার সুপ্ত অনুভূতির জন্য একটা ফুলকির মতো ছিলো যেনো এক মূহূর্তে হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে আমাকে বাধ্য করেছিলো তার আবদারটা রাখতে,
বিকেল ৩টার দিকে আমি কলেজের বাইরে দাড়িয়ে ছিলাম তার অপেক্ষায়, সে এসেছিলো তবে তা যে আমার হৃদয়ভাঙার গল্প লেখার জন্য তখনো আমার অজানা ছিলো! হুট করে তার পাশে এসে দাড়ালো সিথি! আমি যেনো অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। এটা কি হওয়ার ছিলো? নাকি সে এটা দেখাবে বলেই এনেছিলো আমাকে! তার অপ্রকাশিত অনুভূতি কি তবে আমার জন্য নয়? সে কিছু বলার আগেই আমি নিজের আবেগতাড়িত ভাঙা হৃদয় নিয়ে ফিরে এলাম। ৬টায় বাস। পুরোটা রাস্তা ভেবে পাচ্ছিলাম না, সে কি আমার চোখের ভাষা বুঝলো না তবে!
এরপর আমি আর তাকে নিয়ে ভাবিনি, এডমিশনের দূর্দান্ত একটা সময় পার করে আমি এক ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে জায়গা করে নিলাম। ক্লাস শুরু হলো হঠাৎ একদিন ফেসবুকে নোটিফিকেশন বেজে উঠলো! ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টে তার নাম ‘অয়ন হোসেইন’! এক মূহূর্তের জন্য থমকে গিয়ে একসেপ্ট করতেই তার ম্যাসেজ এলো!
– আমাকে ভুলে গিয়েছো? সেদিন কেনো তুমি দাড়ালে না! কেনো চলে গেলে! আমাকে একটা সুযেগ দিতে! আমি কি তারও যোগ্য ছিলাম না?
আমি শান্তভাবে লিখলাম, সিথিকে তোমার পাশে ভালোই লাগছিলো, আমি জানতামই না তোমরা সম্পর্কে আছো! শুভকামনা!
– তবে কি এই জন্য সেদিন দাড়ালে না? একবার শুনতে আমার কথা! সে কখনই আমার কিছু ছিলো না। হ্যা তাকে পছন্দ করতাম, তবে তা শুধুই একটা টান ছিলো, সে আমাকে কখনো দাম দেয় নি! পরে যখন আমি আর তাকে চাইনি সে এসেছিলো আমার সাথে দেখা করতে কিন্তু আমি আর রাজি হইনি! কারণ আমি তোমাকে চেয়েছিলাম! অথচ তুমি বুঝোনি।
আমি তোমাকেই ভালোবেসেছি! আজও বাসি। অপেক্ষাটা আর দীর্ঘ করিও না!

সেই যে তার মায়াজালে ফাঁসা, সেই যে স্বীকারোক্তি! আমি আর আটকাতে পারলাম না নিজেকে। নিজের সুপ্ত অনুভূতি বলে ক্ষান্ত হয়েছিলাম সেদিন!
তারপর কত বছর কাটলো। আজ ৬বছর হলো অয়ন আমার জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে! সে আমাকে বিয়ে করে নিয়েছে তার মায়াজালে আজীবন আটাকানোর জন্য! তবুও মাঝে মাঝে সিথিকে নিয়ে তার খালাতে মামাতো বোনকে নিয়ে আমার জেলাসী কমে নি😂! তবুও যেনো সে হাল ছাড়েনি! ভালোবাসা কমায় নি!
এভাবেই কতদূর যাবো জানিনা তবে হাল আমি ছাড়ছি না।

Author Details:
আসমাউল হুসনা তৃপ্তি
Rajshahi University of Engineering and Technology
Department: EEE
Year: 2nd

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *