জোনাকি

জোনাকি
Mahadi Hasan

জোনাকিরা কি মারা যাওয়ার পরও আলো ছড়ায়? আমার ঘরে একটা জোনাকি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোটবেলায় আমি জোনাকিকে ডাকতাম ‘জোনাকি পাখি’। বড় হয়ে বুঝতে পারলাম জোনাকি আদতে একটা পোকা। তবে জোনাকি পোকা নামটার চেয়ে জোনাকি পাখি নামটাই সুন্দর। সারা ঘর অন্ধকার, আর মাঝে মাঝে এই জোনাকিটা আলো ছড়াচ্ছে। এই আলো কি আঁধারকে আরো বাড়িয়ে দেয় না?

মাঘাটা ঝিমঝিম করছে, কিছু একটা খাওয়া দরকার। গত ৩ মাসের মেসের বিল বাকি পড়ে আছে। বিল বাকি থাকার কারণে মেসের খাবারটাও কপালে জোটে না। গত মাসটা তাও বাইরের এটা ওটা খেয়ে চালিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এ মাসটা আর চলছে না। আজ দিয়ে ৪ দিন না খেয়ে থাকা হবে। সত্যিই কিছু একটা খাওয়া দরকার, শার্টটা গায়ে দিয়ে বাইরে আনলাম দেখি একটা প্রাণী মেসের সামনে দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখেন দৌড়ে আসলো। প্রাণীটা একটা ছোট বাচ্চা। আশেপাশের কোনো বাসার হবে। কয়েকদিন আগে একটা আইসক্রিম খেতে দিয়েছিলাম, সেটার লোভেই আমার কাছে বারবার আসে। বাচ্চাটার চেহারা অনেকটা সুবর্ণের মতো। সুবর্ণের কথা মনে হতেই বুকে একরাশ দীর্ঘশ্বাস এসে জমা হলো।

সুবর্ণ আমার ছোটভাই। পরিবারের সাথে আমার দেখা নেই প্রায় এক বছর হতে চললো। মাস্টার্স পাশ বেকার একটা যুবক কি

পরিবারের সাথে ভালো কোন সম্পর্ক রাখতে পারে? রাগারাগি করে বাসা ছেড়ে এসেছি, বাসাও আর কখনো আমায় ডাকেনি। বাসায়

ফেরাও হয়নি। পরিবারের সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক ভালোবাসার নয়, সম্পর্কটা অনেকটা বৃত্তের মতো। একটা দূরত্ব রেখে আমি

তাদের ঘিরে আবর্তন করি, না পারি এই বন্ধন ভেঙে তাদের কাছে যেতে, না পাই এই বৃত্ত ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার অনুমতি। কেউ কি

কখনো পারে এই অদৃশ্য বৃত্ত ভাঙতে? বাচ্চাটা আমার শার্ট ধরে টানছে। আকার ইংগিতে বোঝালো আইসক্রিম খেতে চায়। আমার খুব

ক্লান্ত লাগছে। শার্টের পকেট থেকে ২০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে আসলাম। টাকাটা আমার সর্বশেষ সম্বল ছিল, ২০ টাকা দিয়ে একদিনের খাবার হয়ে যায়। আমি মেসের দিকে ফিরতে লাগলাম। মাখাটা আবার ঝিম ঝিম করতে শুরু করছে। ঘুমালে কি ক্ষুধার যন্ত্রণা কমে যায়? মাখাটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আমি ঘরের বিছানায় নিজেকে সমর্পন করলাম। এভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে হয়?

একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। হঠাৎ একটা চিৎকার শুনতে পেলাম, তারপরে অনেকগুলো চিৎকার। উঠে দাঁড়ালাম। জানালা দিয়ে দেখতে সেলাম সামনের রাস্তায় জটলা বেঁধে আছে। দ্রুত

ঘরের বাহিরে আসলাম। অনেকগুলো লোক একটা ট্রাককে ধাওয়া করছে। রাস্তার ঠিক মাঝখানে একটা লাশ পড়ে আছে, একদম থেঁতলে গেছে, লাশটা একটা বাচ্চার। লাশটা থেকে একটু দূরে একটা ২০ টাকার রক্তাক্ত নোট পড়ে আছে। কিছুক্ষণের জন্য আমার ইন্দ্রিয়গুলো অবশ হয়ে গেলো। রক্তাক্ত নোটটা খুব সাবধানে নিজের পকেটে রেখে দিলাম। ২০ টাকায় আমার সকালের নাশতা হয়ে ভাবে। আবেগের। টান থোক পেটের টানটাই বেশি কই দিচ্ছে। দ্রুত হেঁটে আমি আমার ঘরে ফিরে আসলাম। আসার দখে কেবলই মনে

হতে লাগলো আমি একটা জোনাকিকে মেরে ফেলেছি। আচ্ছা,জোনাকিরা কি মারা যাওয়ার পরও আলো ছড়ায়?

Author details:
Mahadi Hasan
HSC examinee

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *